https://www.prothomalo.com/bangladesh/environment/zvtdjufp4h
বরেন্দ্রভূমিতে মৌসুমের শেষ দিকের (নাবি) একটি সুস্বাদু জাতের আম খুঁজে পেয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদেরা। আমটির এখনো কোনো নাম পায়নি। তবে উদ্যানতত্ত্ববিদদের আশা, এত আমের ভিড়ে নতুন আমটি শক্তিশালী জায়গা করে নেবে।
আমের গুণাগুণ নিয়ে উচ্ছ্বসিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক বিমল কুমার প্রামাণিক। তাঁর কথায়, আমটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত জাত এবং জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য ক্ষীরশাপাতির সঙ্গে তুলনীয়। বলা চলে অসময়ের ক্ষীরশাপাতি।
আমটি পর্যবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হর্টিকালচার সেন্টারের সহকারী উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহীন সালেহ্উদ্দিন। তিনি জানালেন, আমের এই জাত এসেছে ভারত থেকে পাঁচ বছর আগে সায়ন (চারা তৈরির উপযোগী ডগা) সংগ্রহের মাধ্যমে। বর্তমানে গাছটি রয়েছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার জইটাবটতলা এলাকায়।
শাহীন সালেহ্উদ্দিনের দেওয়া তথ্যমতে, এ আমের আঁটি খুবই পাতলা, ওজনে হালকা এবং কোনো প্রকার আঁশ নেই। এর খাওয়ার যোগ্য অংশের (পাল্প) রং গাঢ় কমলাটে। গড় মিষ্টতা ২২ টিএসএস (টোটাল সলিউবুল সুগার)। এ আমের গড় ওজন ৫০০ গ্রাম। তবে এটি ৪০০ গ্রাম থেকে প্রায় ১ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। রোগবালাইয়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। বিশেষ করে আমের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর মাছি পোকার (ফ্রুট ফ্লাই) আক্রমণ খুবই কম। একটি তিন থেকে চার বছর বয়সী গাছে ফলন বছরে প্রায় ২০ কেজি। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলনও বাড়বে।
আমটির চাষাবাদ শুরু হয়েছে মাইনুল ইসলাম (৪৭) নামের এক আমচাষির হাত ধরে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের একজন দক্ষ মালি, জানালেন শাহীন সালেহ্উদ্দিন।
মাইনুল ইসলাম বললেন এই আমের গল্প, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর এলাকার রবিউল নামের আমার এক বন্ধু ভারতে গিয়ে আমটি খেয়ে মুগ্ধ হয়। তার মনে হয় আমটি বাংলাদেশে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হয়। সে ওই আমগাছের কয়েকটি সায়ন সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে এসে আমাকে দেয় পাঁচ বছর আগে। ওই বছর একটি গাছে কলম বাঁধি।
আম খেয়ে আমিও মুগ্ধ। পরের বছর ৪০টি গাছ তৈরি করি। ৪০টি গাছই ফলন দিতে শুরু করে। আগস্টের মধ্য ভাগ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্য ভাগ পর্যন্ত পাকা আম পাওয়া যায়। আম বিক্রি করেছি ৫০০ টাকা কেজি পর্যন্ত। প্রতিটি গাছে প্রায় ২০ কেজি করে আম পেয়েছি।’
রাজশাহীর গোদাগাড়ী-আমনূরা সড়কের পাশেই আমচাষি মাইনুল ইসলামের ইজারা নেওয়া ছয় বিঘার আমবাগান। ৯ আগস্ট বিকেলে বাগানের ভেতরে ঢুকে অল্প কিছু দূর এগোতেই চোখ আটকে যায়। থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। মৌসুমের শেষে গাছে এমন থোকা চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো। সঙ্গে থাকা উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহীন সালেহ্উদ্দিন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বললেন, এমন থোকা ভালো ফলনের নিদর্শন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে অতি সম্প্রতি হর্টিকালচার সেন্টারে আমটির স্বাদ নিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক পলাশ সরকার।
এরপর আমটি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে উদ্যানতত্ত্ববিদদের মতকে সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। প্রথম আলোকে বললেন, অসময়ের আম হিসেবে এটি দারুণ একটা আম। অর্থনৈতিক গুরুত্বের দিক থেকে যে সুস্বাদু আম যত বেশি দেরিতে পাওয়া যাবে, সে আমের দাম পাওয়া যাবে তত বেশি। সে ক্ষেত্রে এ আমের চাষ গুরুত্ব পাবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস